মোঃ শেখ শহীদুল্লাহ্ আল আজাদ,
স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনা জেলার রূপসা উপজেলা সহ কোভিড-১৯ মহামারিটি বিশ্বজুড়ে পারিবারিক জীবনকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছে, যা মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং দুঃখবোধ তৈরি করেছে। মাস্ক কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বন্ধে সহায়তা করে। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান উপায় হলো শ্বাসনালী থেকে বেরিয়ে আসা ক্ষুদ্র জলকণা (ড্রপলেট), যা মানুষ কথা বলা, গান গাওয়া, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় বেরিয়ে আসে। যদিও গবেষণা চলমান রয়েছে, তবে আমরা এখন জানি যে, ভাইরাস এমন মানুষের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে যাদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। এর অর্থ হচ্ছে, কিছু মানুষ সংক্রমিত হতে পারে, এমনকি কোনো ধরনের উপলব্ধি ছাড়াই।
জীবাণুর সংক্রমণ কমাতে মাস্কের ব্যবহার নিয়ে কয়েকটি দেশে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে অনেক পরিবারের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো মাস্ক পরার কারণে ২০২০ সাল তাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সাধারণ তথ্যের জন্য, এর লক্ষণগুলো কী, কীভাবে এটি ছড়ায় এবং কীভাবে নিজেকে এবং শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে সকলের জানা উচিৎ।এটি কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেশি এমন স্থানগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ।
তবে জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে অন্যদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা সবসময় সম্ভব নয়, যে কারণে এই ধরনের পরিস্থিতিতে সবাইকে সুরক্ষিত থাকার জন্য কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।তবে মনে রাখবেন, কেবল একটি মাস্ক কোভিড-১৯ এর বিস্তারকে আটকাবে না। আমাদের সবাইকেই শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়ার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। একসঙ্গে এসব পদক্ষেপর মাধ্যমে কোভিড-১৯ কে পরাহত করা যাবে। দুই ধরণের মাক্স আছে। যেমন- নন-মেডিকেল মাস্ক (কাপড়ের মাস্ক) আপনি এবং আপনার পরিবার যদি এমন কোনো জায়গায় বাস করেন যেখানে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেশি এবং যদি কোভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গ না থাকে, সেক্ষেত্রে নন-মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। মেডিকেল মাস্ক: মহামারিজনিত কারণে বিশ্বব্যাপী মেডিকেল মাস্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
যদি আপনি বা পরিবারের কোনো সদস্য কোভিড-১৯ এর কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন (৬০ বছরের বেশি বয়সী বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত) কিংবা আপনি যদি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কারো পরিচর্যায় নিয়োজিত থাকেন, তবে সেত্রে মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনার যদি কোভিড-১৯ এর উপসর্গ থাকে তবে অন্যদের সুরক্ষার জন্য মেডিকেল মাস্ক পরা উচিত। কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে, তবে এগুলোর কার্যকারিতা নির্ভর করে এতে ব্যবহৃত কাপড়ের ধরন এবং কয় স্তরের কাপড় ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তিন স্তরের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয় যেখানে: ভেতরের স্তরটি তৈরি হবে সুতি কাপড়ের মতো শোষণকারী উপকরণ দিয়ে মাঝের স্তরে থাকবে পলিপ্রোপাইলিনের মতো বোনা নয় এমন উপকরণ বাইরের স্তরটি তৈরি হবে পলিয়েস্টার বা পলিয়েস্টার মিশ্রণের মতো শোষণকারী নয় এমন উপকরণ দিয়ে।
আপনি মুখ ঢেকে রাখার জন্য যে ধরনের মাস্কই বেছে নেন না কেন, এটা এমন হতে হবে যাতে নাক, মুখ ও চিবুক ঢেকে রাখা যায় এবং রাবারের বন্ধনী বা গিট দিয়ে সুরতি থাকে। মাস্কের ব্যবহার এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কে প্রচুর ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছে, সুতরাং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আপনার জাতীয় এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপরে মতো বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। একটা সময় মানুষের রুমাল ব্যবহারের প্রচলন ছিল। মানুষ সর্দি, কাশি ও হাঁচি এবং হাত মুখ পরিষ্কারের কাজে রুমাল ব্যবহার করতো। তাই সার্বক্ষণিক মহিলারা তাদের ভেনিটি ব্যাগে ও পরুষ তাদের পকেটে রুমাল নিশ্চিত রাখতেন। কিন্তু সেই রুমালের স্থলে টিস্যু পেপার জায়গা করে নিয়েছে নিত্যদিনের পণ্য হিসেবে। টিস্যু পেপার ব্যবহারের প্রথম দালিলিক প্রমাণ মেলে চীনে। টিস্যু পেপার ব্যবহারের বিস্তর প্রমাণ মেলে ১৪০০ সালে। অবশ্য আমরা যে টিস্যু পেপার বা টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করি, সেটার প্রচলন খুব বেশি দিনের নয়।
১৮৫৭ সালে জোশেফ গোয়েত্তি সর্ব প্রথম তাঁর উদ্ভাবিত টয়লেট টিস্যুু বিক্রয়ের চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে তখনো মানুষ টয়লেট টিস্যুুকে বাহুল্য হিসেবেইন মনে করত। অবশ্য এই মানসিকতার পরিবর্তন আসে ১৮৯০ সালে, যখন স্কট পেপার কোম্পানি টিস্যুকে রোল করে আকর্ষণীয় মোড়কে বাজারজাত করে। এরপর থেকে খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে টিস্যু পেপার। ১৯৯৯ সালে দেশে প্রথম টিস্যু উৎপাদন শুরু করেন বসুন্ধরা গ্রুপ। কোভিড-১৯ কালে সংক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকার জন্য বিশেষজ্ঞ মতে মাক্স একটি কর্যকারী পন্থা। কিন্তু এই অতিব গুরুত্বপূণ মাক্স ব্যবহার করতে রূপসা জনসাধারণের মাঝে অনিহা দেখা যায়। হাটে, বাজারে, রোডে, ঘাটে, দোকান পাট অনেক মানুষই আছে মুখে মাক্স ব্যবহার করছেন না।
ফলে দিনেদিনে রূপসায় করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। রূপসাবাসির স্বাস্থ্য ঝুঁকি আজ চরমে। স্বাস্থবিধি উপেক্ষা করে চলাচল করছে রূপসার জনসাধারণ। তাই বলে প্রশাসন বসে নেই। প্রতিদিনই তারা কোভিড-১৯ ভ্রাম্যমান অভিযান বিদ্যমান রেখেছেন। এই্ অভিযানের সময় কিছু কিছু জনসাধারণ পকেট থেকে বারবার ব্যবহিত অনিরাপদ ও নোংরা মাক্স বের করে মুখে পড়ছে এবং একটু দুরে গিয়ে খুলে তা আবার ভাজ করে রুমালের ন্যায় পকেটে ঢুকিয়ে রাখছেন। মাক্স যেনো রুমালে পরিণত হয়েছে জনসাধারণের কাছে।
অপরদিকে রূপসায় করোনার সক্রমণ ক্রমেই বেড়ে চলছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী করোনা নতুন টেষ্ট করা হয়েছে তার মধ্যে পজেটিভ এসেছে ১০জনের। রূপসায় সর্বমোট করোনার আক্রান্ত্রের সংখ্যা ৪৫৪, মৃত্যু সংখ্যা দাড়িয়ে ২৮ জনে। সর্বমোট টেষ্ট করা হয়েছে ১৪৫৯ টি। ফলোশ্রুতিতে আজ ২২ তারিখ থেকে এক সপ্তার জন কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সক্রমণ তরতর করে বেড়ে যেতে পারে বলে সুধীজনরা মনে করেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।